Monday, February 19, 2018

ফাঁস হওয়া প্রেম ও প্রতিকার

    February 19, 2018   No comments


নাভিদ সাহেব শক্ত বাবা। প্রতিবেশী মারফত জানতে পারলেন, তাঁর এসএসসি পরীক্ষার্থী কন্যা প্রেম করছে। শক্ত বাবা হলে কী হবে, প্রথমে তিনি তা বিশ্বাসই করলেন না। মেয়ের ওপর তাঁর ভরসা আছে। মেয়ে তাঁর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রেম করতেই পারে না।

কিন্তু প্রতিবেশীরা যেমন হয়, নাভিদ সাহেবের পেছনে লেগেই থাকল। বলতে থাকল, মেয়ে তো গোল্লায় যাচ্ছে, প্রেম করে উচ্ছন্নে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

নাভিদ সাহেব দাঁতে দাঁত চাপলেন। বললেন, ‘কেউ যদি প্রমাণ দেখাতে পারো, তাহলে বিশ্বাস করব!’
প্রতিবেশীরা পড়ল ফাঁপরে। আগের যুগের প্রেম হলে চিঠি-টিঠি থাকত। সেগুলো কোনোমতে হাতে এলেই কেল্লা ফতে করা যেত। কিন্তু যুগ তো এখন ইন্টারনেটের। প্রেম হয় ফেসবুকে। এখন প্রেম প্রতিষ্ঠা করাই মুশকিল, প্রমাণ তো আরও দূরের কথা!

নাভিদ সাহেব তাঁর মাথা নাড়িয়ে হাসলেন। তিনি জানতেন, এসব বাজে কথা! অনেকটা যেন মিডিয়ার সৃষ্টি। কিন্তু মিডিয়া হোক বা প্রতিবেশী, কোনো একটা কিছুর পেছনে এরা লাগলে হয়, সেটার হালুয়া টাইট করে ছাড়ে। প্রতিবেশীরা কীভাবে কীভাবে যেন নাভিদ সাহেবের এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ের ফেসবুক হ্যাক করে ফেলল। ইনবক্সে বিস্তর প্রেমালাপ! নাভিদ সাহেবের সামনে সেগুলোর স্ক্রিনশট পেশ করা হলো। নাভিদ সাহেব তিন দিন কথা বলতে পারলেন না। চতুর্থ দিন তিনি শুধু উচ্চারণ করলেন, ‘বন্ধ!’

কী বন্ধ, কেন বন্ধ—কেউ এই প্রশ্নের উত্তর উদ্ধার করতে পারল না। নাভিদ সাহেব শুধু কিছুক্ষণ পরপর বলে যান, ‘বন্ধ!’

অচিরেই অবশ্য বোঝা গেল নাভিদ সাহেবের কথার মানে। তিনি তাঁর মেয়ের ফেসবুক বন্ধ করে দিতে চান। কারণ, ফেসবুকের জন্যই এসব হচ্ছে। কথা হচ্ছে, মনের ভাব-ভালোবাসা আদান-প্রদান হচ্ছে। নাভিদ সাহেব জাকারবার্গকে চিঠি লিখলেন—

প্রিয় জাকার,
আমার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ের পরীক্ষা তোমার ফেসবুকের জন্য হুমকির মুখে। পত্রপাঠমাত্র তুমি তার অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেবে। ফেসবুকে আমার মেয়ের নাম ‘অ্যাঞ্জেল নিলু’।
ইতি
নাভিদ চৌধুরী
ঢাকা, বাংলাদেশ

জাকারবার্গ সজ্জন মানুষ, তার ওপর চীনের জামাই। ফলে নাভিদ সাহেবকে এশিয়ান শ্বশুর জ্ঞান করে ‘অ্যাঞ্জেল নিলু’ অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দিলেন। সেদিন বাংলাদেশে হঠাৎ করেই ১ লাখ ৭৮৪টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেল।

নাভিদ সাহেব হাসলেন। প্রযুক্তিকে কীভাবে তিনি নিজের মতো করে ব্যবহার করেছেন, এ বিষয়ে কড়া বক্তব্য রাখলেন প্রতিবেশীদের সামনে।

মেয়ের পরীক্ষা চলতে থাকল। প্রতিদিনই গুজব উঠল, মেয়ে নাকি লুকিয়ে তার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করছে। নাভিদ সাহেব হাসলেন। শত্রুর মুখে ছাই দিয়েছেন তিনি, তারা তো এখন নানান গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করবেই। নাভিদ সাহেব আত্মপ্রসাদে নাক ডেকে ঘুমালেন।

সেই ঘুম ভাঙল শেষ পরীক্ষার দিন। সেদিন মেয়ে তার প্রেমিককে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে! খবর শুনে নাভিদ সাহেব থম মেরে কিছুক্ষণ বসে থাকলেন। তারপর মাথা নাড়িয়ে ভাবলেন, শুধু ফেসবুক বন্ধ করা ভুল ছিল, শহরের সব কাজি অফিসও বন্ধ করে দিলে আজ এই বেইজ্জতিটা হতে হতো না!

বি.দ্র.: জীবিত বা মৃত, বিবাহিত বা অবিবাহিত কারও সঙ্গে এই গল্পের কোনো চরিত্রের কোনো রকম মিল খুঁজে পেলে তা নিতান্তই সত্যি। আপনার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়!

সূত্রঃ রস-আলো

Khalid Hasan

About Khalid Hasan

Author Description here.. Nulla sagittis convallis. Curabitur consequat. Quisque metus enim, venenatis fermentum, mollis in, porta et, nibh. Duis vulputate elit in elit. Mauris dictum libero id justo.

Previous
Next Post
No comments:
Write comments

Get updates in your email box

Complete the form below, and we'll send you our recent update.

Deliver via FeedBurner
© 2018 পিঁপড়াবিদ্যা ™ । ডিজাইন করেছেন মো: খালিদ হাসান । সর্বসত্ত সংরক্ষিত ®